কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে প্রতিটি মৃত্যুর স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। তাঁরা বলেছেন, ছাত্র-জনতার মৃত্যুর ঘটনাগুলো আসলে হত্যাকাণ্ড। এসব হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সব ধরনের হয়রানি-নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষকদের কেউ কেউ বলেছেন, দাসত্বের শৃঙ্খল কীভাবে ভাঙতে হয়, তা এই প্রজন্ম শিখিয়েছে।
শিক্ষকদের উদ্যোগে গতকাল বৃহস্পতিবার সমাবেশ-মানববন্ধন ও মিছিল হয়েছে ঢাকাসহ দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবেশ হয়েছে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে। গতকাল সকালে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক আয়োজিত এই কর্মসূচির ব্যানারে লেখা ছিল 'নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাবেশ'।
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) ও স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও অংশ নেন। এ ছাড়া বেসরকারি কলেজের শিক্ষকেরাও সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। বেলা ১১টায় সমাবেশ শুরুর পরপরই শুরু হয় প্রবল বৃষ্টি। শিক্ষকদের অনেকে ছাতা হাতে, কেউবা বৃষ্টিতে ভিজে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলা এই সমাবেশের পুরোটা সময় দাঁড়িয়ে ছিলেন। সমাবেশের এক পর্যায়ে কয়েক শ শিক্ষার্থী যোগ নেন। এই সমাবেশ শুরুর আগে সেখানে পৃথকভাবে মানববন্ধন করেন লোকপশাসন ও অর্থনীতি অনিরাপদে রেখে শিক্ষকেরা শান্তিতে ঘরে বসে থাকবেন না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মঈনুল ইসলাম বলেন, 'আজকে পুলিশ আমার শিক্ষার্থীর মুখ চেপে ধরেছে। তাকে কথা বলতে দিচ্ছে না। এই বাংলাদেশ কি আমরা দেখতে চেয়েছি?' তিনি বলেন, প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের স্বচ্ছ নিরপেক্ষ তদন্ত করে বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
সমাবেশ চলাকালে ঘোষণা দেওয়া হয়, অনেক শিক্ষককে আসতে দেওয়া হচ্ছে না।প্রতি ফোঁটা রক্তের হিসাব নিতে হবে
সমাবেশে প্রায় ২০ জন শিক্ষক বক্তব্য দেন। সমাবেশ শেষে অপরাজেয় বাংলার সামনে থেকে শিক্ষকেরা মিছিল বের করেন, তাতে শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন। এই মিছিল টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের দিকে যায়। পথে ভিসি বাসভবন পার হওয়ার সময় মিছিলে স্লোগান ওঠে, 'দড়ি ধরে মারো টান, ভিসি হবে খান খান'। অনেকে 'ভুয়া ভুয়া' স্লোগান দেন। মিছিল রাজু ভাস্কর্যের সামনে যাওয়ার পর সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা সরকারের উদ্দেশে বলেন, 'প্রতি ফোঁটা রক্তের হিসাব নিতে হবে।' পরে শিক্ষকেরা মৌন মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যান। সেখানে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এর আগে গতকাল সকালে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন ও অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আয়োজনে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। সেখানে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রতিপক্ষ না ভেবে তাঁদের যৌক্তিক দাবির বিষয়টি ইতিবাচকভাবে সরকারের দেখা দরকার ছিল। কিন্তু সেটি না করে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে আন্দোলন দমন করতে চেয়েছে সরকার। যে কারণে এত প্রাণহানি হলো, এর দায় সরকারের।